আমাদের সম্পর্কে

sarwar

মো. তানভীর সারওয়ার, প্রতিষ্ঠাতা, বাঙালী ফুড

বাঙালী ফুড নিয়ে কিছু কথা

প্রখ্যাত লেখক শিবরাম চক্রবর্তী তাঁর লেখায় নিজের জীবনের দুটি মাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন – ‘খাই আর শুই’। সাহস করে কিংবা লজ্জা ভেঙে মুখে না বললেও শিবরাম চক্রবর্তীর মতো ‘খাই আর শুই’ লক্ষ্য নিয়ে চলা বাঙালির সংখ্যা নেহায়েত কম হবে বলে বোধ করি না। আমরা খেতে বসে ‘ভাতঘুম’ দেওয়ার কল্পনায় উদ্বেলিত হই আবার ‘ভাতঘুম’ দিয়ে উঠে কী খেতে পারি সেই ভাবনাও মন থেকে সরে না। ভালো ভালো খাবারের কল্পনাতে শিবরাম যেমন বলেছেন, ‘মনে পড়লে এখনও জিভে জল আসে।

‘পেটে খেলে পিঠে সয়’ বাঙালির কাছে খাবার কেবল জৈবিক উদরপূর্তির চাহিদা নয়। আর তাই বাঙালির কাছে বৈদিক সংস্কৃত অনুসারে ‘ভোজন’ শব্দের অর্থে সুখানুভূতি এবং খাদ্য দুটোই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আমাদের খেয়ে সুখ, খাইয়ে সুখ, খাবার কথা ভেবে সুখ, খাবার কথা বলে সুখ আবার কে কত বেশি খেতে পারি কিংবা খাওয়াতে পারি তার প্রচ্ছন্ন কিংবা অপ্রছন্ন তুল্যমূল্য বিচারে নেমেও সুখ। ‘ভোজন’-এর আনন্দযাপনে যোগ্যতার বিচারে কেউ আমরা ‘ভোজনবিলাসী’, কেউ বা ‘ভোজনরসিক’, কিংবা ‘ভোজনপটু’, কেউ বা ‘ভোজন বিশারদ’। প্রখ্যাত কথাসাহিতিক সৈয়দ মুজতবা আলী কিন্তু এ-ব্যাপারে তাঁর সুস্পষ্ট মতামত জানিয়ে গেছেন। তাঁর মতে, খাদ্যের হাজার রকমফের থাকলেও মোটাদাগে খাদক দু-প্রকার – ভোজনবিলাসী আর ভোজনপটু। ভোজনবিলাসীরা হাজার খাবারের ভিড়েও তাঁদের মন-মর্জি অনুযায়ী, তাঁদের রসনার ধার মাথায় রেখে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাবার উপভোগ করেন, সব খাবার তাঁদের রুচিতে না-ই সইতে পারে। অন্যদিকে ভোজনপটুদের খাবারে কোনো বাছবিচার নেই। পেটে জায়গা না থাকলেও তাঁদের মনের আর চোখের খিদে মরে না কখনো, কোনো অবস্থাতেই। খাবার হলেই হলো, তা সে যে-খাবারই হোক না কেন! খাবার হজমে তাঁদের পটুত্ব অবিসংবাদিত। তো সে আপনি ভোজনবিলাসীই হন কিংবা ভোজনপটু, বাঙালি মাত্রই ভোজনরসিক আর কেউ বা আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ভোজনবিশারদ।